থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সামসেন রোডে ভয়াবহ সড়কধসের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ভাজিরা হাসপাতালের সামনে হঠাৎ করে বিশাল একটি গর্ত তৈরি হয়েছে। গর্তটির গভীরতা প্রায় ১৬০ ফুট এবং প্রস্থ প্রায় ১০০ ফুট। ঘটনাটি ঘটে বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে, ঠিক সোয়া ৭টার দিকে। এই সড়কধসের ফলে আশেপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে, তবে সৌভাগ্যবশত কেউ হতাহত হয়নি।
গর্তটি তৈরি হয় সামসেন রোডের সেই অংশে, যা ভাজিরা হাসপাতাল রেলস্টেশনের কাছাকাছি। এই ধসের পরপরই ভাজিরা এবং সাংঘি রোডের মধ্যকার যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুসিত বিভাগ অফিস জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তার জন্য দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুরো এলাকা এখন নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে এবং স্থানীয় মানুষজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল জানিয়েছেন, এই গর্তের কারণে সড়ক ও টানেল দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এগুলো মেরামত করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগতে পারে। একই দিনে অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে এই ইস্যুটি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই সড়কধসের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ম্যাস রেপিড ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গর্তটি নিচের টানেলের একাংশে ধস নামার ফলে তৈরি হয়েছে, যেখানে আশপাশের মাটি ফাঁকা জায়গায় পড়ে গিয়ে এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। গর্তটি তৈরি হওয়ার সময় একটি বড় পানির পাইপও ভেঙে পড়ে, যার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়।
ধসের কারণে ভাজিরা হাসপাতালের পাশেই অবস্থিত সামসেন থানার ভবনটিও এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই থানার কিছু ভূগর্ভস্থ ফাউন্ডেশন পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এলাকাটির মাটি এখনও নড়াচড়া করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
ভাজিরা সরকারি হাসপাতালটির মূল কাঠামো এখনো ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও, নিরাপত্তার কারণে এর বহির্বিভাগের সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩,৫০০ রোগীকে আশপাশের নিরাপদ ভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আশপাশের আবাসিক ভবনের বাসিন্দাদেরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোপলিটন ইলেকট্রিসিটি অথরিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গর্তের মধ্যে পড়ে গেছে দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং পুলিশের একটি গাড়ি। যেখানে গর্ত তৈরি হয়েছে, সেখানে আগে থেকেই ম্যাস রেপিড ট্রান্সপোর্টের নতুন লাইন নির্মাণকাজ চলছিল। সেই কারণেই আগে থেকেই ঐ রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
ব্যাংককের গভর্নর চাডচার্ট সিত্তিপুন্ত জানিয়েছেন, গর্তটি মূলত ভাজিরা হাসপাতাল রেলস্টেশন এবং তার সংযোগস্থলের নিচে তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, টানেলের ফাঁকা জায়গায় মাটি ধসে পড়ে আশপাশের অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। পানির বড় একটি পাইপ ভেঙে যাওয়ার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
দ্রুত ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং টানেলের মধ্যে যে সমস্ত ফাঁকা জায়গা বা ছোট গর্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলোকেও দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন ভবিষ্যতে কোনো বড় বিপর্যয় না ঘটে।
এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। যদি বৃষ্টিপাত শুরু হয়, তবে গর্তটি আরও বিস্তৃত হতে পারে এবং আশপাশের অবকাঠামোর জন্য আরও বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় বৃষ্টির সম্ভাবনা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
সামগ্রিকভাবে, ব্যাংককের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই ধস প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তবে কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে যাতে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা যায় এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।