দেশ ও জাতীয় স্বার্থে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলনিরপেক্ষ রাখার আহ্বান জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, প্রশাসনে ‘আমার লোক’ ও ‘তোমার লোক’ চিহ্নিত করার প্রবণতা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। তার মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যত অনৈতিক ও অমানবিক কাজের প্রচলন দেখা গেছে, তার সূচনা হয়েছে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, ভুয়া নির্বাচন কিংবা প্রশাসনের দলীয়করণ—সব কিছুর সূত্রপাত আওয়ামী লীগ আমলেই, পরে অন্যরা কেবল সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে নিজেদের অনুগত কর্মকর্তাদের খুঁজে বেড়ায়। এই ‘তোমার লোক–আমার লোক’ সংস্কৃতি থেকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলকেই বেরিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকে অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে, তবেই রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনায় আরও অংশ নেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের এবং পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম প্রমুখ।
প্রশাসনের নিরপেক্ষতার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার লোক–তোমার লোক’ সংস্কৃতি কেবল রাজনীতিতেই নয়, নাগরিক সমাজেও প্রভাব ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আমলে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদের গ্রেপ্তারের পর যে নীরবতা দেখা গিয়েছিল, সেটিও সেই সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। তিনি বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে এক নির্মম, দমনমূলক ও ভয়ঙ্কর শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। কেউ কেউ রাজনৈতিক নির্দেশে অত্যাচার করত, আবার অনেকে নিজেদের ক্ষমতা ও স্বার্থে অতিরিক্ত নির্যাতনের পথ বেছে নিত। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ছিলেন তার অন্যতম উদাহরণ।
ড. আসিফ নজরুল আরও জানান, ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধন আনা হয়েছে—এখন থেকে কোনো ব্যক্তিকে আটক করলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে তার পরিবারের সদস্যদের জানাতে হবে। পাশাপাশি গুমবিরোধী আইনে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য না দিলে ঘটনাটি গুম হিসেবে গণ্য হবে।
নিউজ ডেস্ক


