রাজশাহীতে আর্থিক অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. একরামুল হক। রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে বিদ্যালয়ের প্যাডে লিখিতভাবে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগপত্রে উল্লেখ রয়েছে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে তিনি প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অব্যাহতি নেবেন।
এর আগে সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন। শিক্ষকরা এক সংবাদ সম্মেলনে একরামুল হকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম ও অসদাচরণের নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। একই সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরাও পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারী শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক একরামুল হক ভর্তি ফি, বিদ্যালয়ের পুকুর ইজারা, পরীক্ষাকেন্দ্র ভাড়া ও কোচিং ফি-সংক্রান্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং করানোর কথা বলে ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করলেও কোচিং না করিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
এ ছাড়াও অভিযোগে বলা হয়, তিনি ক্রয় কমিটিকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে কেনাকাটা করেছেন, এক নারী সহকর্মীর বিষয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন, এবং বিদ্যালয়ের ভোটার তালিকা জালিয়াতির সঙ্গেও জড়িত। এছাড়া তিনি বর্তমানে নওগাঁর একটি বিদ্যালয়ের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন এবং অতীতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, “প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতি সবাই জানে। শিক্ষার্থীরাও তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ। কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।”
শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলনের সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপে দুপুরে প্রধান শিক্ষক একরামুল হক পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
বিদ্যালয়ের প্যাডে লেখা ঘোষণায় তিনি উল্লেখ করেন, “আমি মো. একরামুল হক এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় সৃষ্ট জটিলতার কারণে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। আমি সজ্ঞানে ও কারও প্ররোচনা ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ঘোষণাটি প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করে।
প্রধান শিক্ষক একরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমাকে ঘেরাও করেছিল, কিন্তু কোনো সহকর্মী পাশে আসেননি। আমি চাপের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। এখানে কাজ করার পরিবেশ নেই।”
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অন্য কোনো বিদ্যালয়ে বদলির আবেদন জানানোর কথাও উল্লেখ করেন।
বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন,
“প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আগেই তদন্তাধীন আছে। তবে আজকের বিক্ষোভ বা পদত্যাগের ঘোষণার বিষয়টি এখনো আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”