ইসরাইল দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এর একদিন আগে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ইসরাইলি বিমান হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন।
যদিও ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছিল, তবু ইসরাইল এখনো দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি এলাকায় সেনা মোতায়েন রাখছে এবং নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে।
রোববার (২ নভেম্বর) ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেন, হিজবুল্লাহ “আগুন নিয়ে খেলছে” এবং লেবাননের প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে দেরি করছেন। তিনি বলেন, লেবানন সরকারকে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে হবে এবং তাদের দক্ষিণ লেবানন থেকে সরাতে হবে। প্রয়োগ সর্বোচ্চ হবে এবং উত্তরের বাসিন্দাদের ওপর কোনো হুমকি সহ্য করা হবে না।
এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে হিজবুল্লাহ আবারও তাদের সামর্থ্য পুনরুদ্ধার করছে এবং সিরিয়া থেকে শত শত স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চোরাই পথে লেবাননে এনেছে। তিনি আরও জানান, লেবাননকে সতর্ক করা হয়েছে—যদি হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র না হয়, বৈরুতের দক্ষিণ উপশহর আবারও বোমা হামলার মুখে পড়তে পারে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হিজবুল্লাহর রকেট হামলার কারণে ইসরাইল-লেবানন সীমান্তের উত্তরের হাজারো মানুষ তাদের বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এই সংঘাত এক বছরের বেশি স্থায়ী হয় এবং দুই মাসের উন্মুক্ত যুদ্ধের পর ২০২৪ সালের শেষের দিকে যুদ্ধবিরতি হয়।
ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী যুদ্ধের সময় দুর্বল হলেও এখনও অস্ত্র ও অর্থের মাধ্যমে টিকে আছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইসরাইল হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ অনেক শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছিল।
যুদ্ধবিরতির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র লেবানন সরকারকে হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র করার জন্য চাপ দিচ্ছে, যদিও হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্ররা এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে।
যুদ্ধবিরতির পরও ইসরাইল লেবাননে বিমান হামলা বন্ধ করেনি। ইসরাইলি বাহিনী বলছে, এসব হামলার লক্ষ্য হিজবুল্লাহর অবস্থান। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হামলা আরও বেড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলি স্থলবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে একটি প্রাণঘাতী অভিযান চালায়। এর পর লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন সেনাবাহিনীকে এসব অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নির্দেশ দেন।
গত অক্টোবরের মাঝামাঝি আউন ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে মধ্যস্থতা করেছিলেন। তবে আউনের অভিযোগ, তার প্রস্তাবের জবাবে ইসরাইল হামলা আরও বৃদ্ধি করেছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার (১ নভেম্বর) দক্ষিণ লেবাননের নাবাতিয়েহ জেলায় ইসরাইলি বিমান হামলায় চারজন নিহত হন। লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনারা একটি গাড়িতে গাইডেড মিসাইল নিক্ষেপ করেছে।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামলার সত্যতা স্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে হিজবুল্লাহর রাদওয়ান বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। সেনাবাহিনী আরও জানায়, ওই ব্যক্তি অস্ত্র পরিবহন এবং দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজে যুক্ত ছিল। এই কার্যক্রম ইসরাইল ও এর নাগরিকদের জন্য হুমকি এবং ইসরাইল-লেবানন চুক্তির লঙ্ঘন।