ঢাকা

যিনি দুনিয়াতেই নিজ নাকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছিলেন

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : ইং
ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত
মানুষের আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় কেবল নিয়তের বিশুদ্ধতার কারণে। নিয়তই আমলের আত্মা—নিয়ত বিশুদ্ধ হলে সাধারণ কাজও ইবাদতে পরিণত হয়, আর নিয়ত বিকৃত হলে বড় বড় কাজও মূল্যহীন হয়ে পড়ে। মানুষ যেমন নিয়ত করবে, তেমনই তার আমলের মূল্য নির্ধারিত হবে। ইসলামের ইতিহাসে বহু সাহাবি নিয়তের বিশুদ্ধতার এমন নজির রেখে গেছেন যা মানবতা ও ঈমানের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ।

তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আনাস ইবনে নযর রাযিয়াল্লাহু আনহু, যিনি বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত থেকে গভীর অনুতাপে দগ্ধ হয়েছিলেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আকুল নিয়তে পরবর্তী যুদ্ধে আত্মত্যাগের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। নিচের হাদিসটি তাঁর সেই নিয়ত, দৃঢ়তা ও শাহাদাতের অনুপম ঘটনা বর্ণনা করে—
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ عَمَّهُ غَابَ عَنْ بَدْرٍ فَقَالَ غِبْتُ عَنْ أَوَّلِ قِتَالِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَئِنْ أَشْهَدَنِي اللهُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَيَرَيَنَّ اللهُ مَا أُجِدُّ فَلَقِيَ يَوْمَ أُحُدٍ فَهُزِمَ النَّاسُ فَقَالَ اللهُمَّ إِنِّيْ أَعْتَذِرُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هَؤُلَاءِ يَعْنِي الْمُسْلِمِيْنَ وَأَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا جَاءَ بِهِ الْمُشْرِكُوْنَ فَتَقَدَّمَ بِسَيْفِهِ فَلَقِيَ سَعْدَ بْنَ مُعَاذٍ فَقَالَ أَيْنَ يَا سَعْدُ إِنِّيْ أَجِدُ رِيْحَ الْجَنَّةِ دُوْنَ أُحُدٍ فَمَضَى فَقُتِلَ فَمَا عُرِفَ حَتَّى عَرَفَتْهُ أُخْتُهُ بِشَامَةٍ أَوْ بِبَنَانِهِ وَبِهِ بِضْعٌ وَثَمَانُوْنَ مِنْ طَعْنَةٍ وَضَرْبَةٍ وَرَمْيَةٍ بِسَهْمٍ

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার চাচা (আনাস ইবনে নযর (রা.) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তাই আনাস ইবনে নযর নিজেই বলেন, আমি সর্বপ্রথম বদর যুদ্ধে নবী (সা.)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। অতএব আল্লাহ যদি (পরবর্তীতে) আমাকে নবী (সা.)-এর সঙ্গে অন্য কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার তাওফীক দেন তাহলে অবশ্যই তিনি দেখবেন, আমি কতো প্রাণপণে লড়াই করি।

এরপর উহুদ যুদ্ধের দিন সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পর লোকেরা পলায়ন করতে শুরু করলে তিনি দোয়া করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! এসব লোক অর্থাৎ মুসলিমগণ যা করেছে, আমি এর জন্য আপনার নিকট ওযর পেশ করছি এবং মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে আমি আমার সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি। এরপর তিনি তলোয়ার নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। 
এ সময় সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হলে বললেন, ‘হে সাদ! তুমি কোথায় যাচ্ছো? আমি তো উহুদের ঐ প্রান্ত হতে জান্নাতের খুশবু পাচ্ছি।’ এরপর তিনি বীরবিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাত লাভ করেন।

(তাঁর শরীরে এতো বেশি আঘাত ছিলো যে,) তাঁকে চেনা যাচ্ছিল না। অবশেষে তাঁর বোন তাঁর শরীরের একটি তিল অথবা আঙ্গুলের মাথা দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন। তাঁর শরীরে আশির অধিক বর্শা, তরবারি ও তীরের আঘাত ছিলো। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪০৪৮)
যে কোনো আমলের ক্ষেত্রে মানুষের অবস্থান ও নিয়ত ও ইচ্ছা তার জন্য ভালো বা মন্দ পরিণতি ডেকে আনে। সুদৃঢ় অবস্থান ও বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে ব্যক্তি যেমন আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ লাভ করে, তেমনি মন্দ নিয়ত তাকে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র করে, তার ধ্বংস ডেকে আনে।

এই হাদিসে বর্ণিত সাহাবীর বিশুদ্ধ নিয়ত তাকে এমন অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে যে, তিনি দুনিয়াতেই নিজ নাকে জান্নাতের সুঘ্রাণ অনুভব করতে পারছিলেন। কাজেই আমাদের প্রত্যেকের উচিত ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি আমল সুদৃঢ়ভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সম্পাদনের সর্বান্তকরণ চেষ্ঠা অব্যাহত রাখা।




কমেন্ট বক্স