ঢাকা

ড. ইউনূসের উপহার, পাক জেনারেলকে দেওয়া মানচিত্রে ভারতের সাত রাজ্য

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : ইং
ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির (জেসিএসসি) চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে একটি বই উপহার দেওয়ায় ভারতে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। 'দ্য আর্ট অফ ট্রায়াম্ফ: গ্রাফিতি অফ বাংলাদেশ'স নিউ ডন' শীর্ষক বইটির প্রচ্ছদ নিয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে প্রতিবেদন করতে দেখা গেছে ডজনেরও অধিক ভারতীয় গণমাধ্যমকে ।
 
ভারতীয় গণমাধ্যম ও নেটনাগরিকদের অভিযোগ, বইটির প্রচ্ছদে বাংলাদেশের যে গ্রাফিতি মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে বিকৃতি রয়েছে। এতে ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের ('সেভেন সিস্টার্স') কিছু অংশকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। মানচিত্রটিকে 'বৃহত্তর বাংলাদেশ' ধারণার প্রতীক হিসেবে অপপ্রচার করতে দেখা গেছে ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে ফেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর পুর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। সোমবার রাতে দেওয়া ওই পোস্টে বলা হয়, আজ ২৭ অক্টোবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান (সিজেসিসি) চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন যেখানে বাংলাদেশের পতাকায় ভারতের উত্তর পুর্বাঞ্চলকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। দাবিটি সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত।

বিষয়টি স্পষ্ট করে প্রেস উইং আরও বলেছে, মূলত, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ পাকিস্তানের জেনারেলকে উপহার দিয়েছেন। এটি গণঅভ্যুত্থানের উপর রচিত একটি সচিত্র দলিল। এর মধ্যে সংকলিত হয়েছে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ঐতিহাসিক চিত্র। সংকলনটি প্রকাশ করেছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন।

গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত বইটি এর আগে প্রধান উপদেষ্টা বহু বিশিষ্ট বিদেশি অতিথিদের উপহার দিয়েছেন। তবে পাক জেনারেলকে এটি উপহার দেওয়ার পর অপতথ্য জুড়ে দিয়ে ছবি ভাইরাল করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আগলে দিতে দেখা গেছে ভারতীয়দের।

এর আগে, ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা একটি প্রাচীন মানচিত্র নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার চালায় ভারত। গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রদর্শনীতে মানচিত্রটি দেখানো হয়, যা নিয়ে ভারতের সংসদেও অযাচিতভাবে উদ্বেগ জানানো হয়। ‌

গত এপ্রিলে চীন সফরের সময়ও ড. ইউনূস ভারতের প্রতি পরোক্ষভাবে কড়া মন্তব্য করেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশকে "মহাসাগরের একমাত্র অভিভাবক" বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়ায় তাদের মহাসাগরে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় ভারতীয়রা।‌

পাকিস্তানের একজন সামরিক জেনারেলের সাথে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সাধারণ একটি উপহার বিনিময় নিয়ে রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছে হলুদ সাংবাদিকতায় বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান দখল করা ভারতীয় গণমাধ্যম। কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়া বিষয়টিকে ইস্যু বানিয়ে বরাবরের মতো এবারও দেশটির নাগরিকদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে দেশটির তথাকথিত গণমাধ্যমগুলোতে।

ভারতের এই সময় তার শিরোনামে লিখেছে, ‘‘বাংলাদেশের মানচিত্রে উত্তর-পূর্ব ভারত! পাকিস্তানি জেনারেলকে ইউনূসের উপহার, নয়াদিল্লিকে উস্কানি?''পত্রিকাটি উপশিরোনামে লিখেছে, "পাক জেনারেলকে এই বই উপহার দেওয়া শুধুমাত্র কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার নয় বলেই মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।’’

এই সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে আরো লিখেছে, ‘‘এক সূত্র জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ ঢাকা ও ইসলামাবাদের সামরিক শক্তির গোপনে হাত মেলানোর ইঙ্গিত। এর মধ্য দিয়ে ভারতের উপরে একটা মানসিক চাপ তৈরির চেষ্টা বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।’’

এবিপি আনন্দ তাদের উস্কানিমূলক শিরোনামে লিখেছে, ‘‘ভারতের উত্তর-পূর্ব নিয়ে বিতর্কিত ম্যাপ, পাকিস্তানের জেনারেলকে উপহার ইউনূসের ; কী ফন্দি আঁটছে ২ দেশ ?’

দ্য ওয়াল অপতথ্য ছড়িয়ে লিখেছে, ‘‘ভারতের ৭ রাজ্য বাংলাদেশের মানচিত্রে, পাক-প্রীতি দেখাতে কট্টর ইসলামিদের স্বপ্ন ইউনুসের চোখে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস ফের একবার পড়শি ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে দাগ লাগানোর চেষ্টা করলেন।’’

অন্যদিকে, ষড়যন্ত্র তত্ব আবিষ্কার করে ভারতের নিউজ ১৮ লিখেছে, ‘‘কোন চাল চালছে বাংলাদেশ? কেন টার্গেট করছে নর্থ-ইস্টকে...পাকিস্তান-চিন, পিছনে আছে গভীর আর পুরনো ষড়যন্ত্র এবং কারণ।’’

প্রেস উইং তাদের ব্যাখ্যায় আরও বলেছে, গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পুর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত।

‘‘বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে। এর আগেও প্রধান উপদেষ্টা ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসঙ্ঘ প্রধান, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সহ বিশ্ব নেতাদের উ



কমেন্ট বক্স