বিপ্লবী সরকার আমলেও ব্যাংকিং খাতে দক্ষ, সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার অভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং ব্যাংকিং খাতের ঋণ কেলেঙ্কারির যারা মূল হোতা দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড ঠিক তাদেরই হাত শক্তিশালী করে অন্তর্বর্তী সরকার কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
এতে করে ব্যাংকিং খাতে কাজের স্থবিরতা ও হতাশা বিরাজ করছে। অপর দিকে আওয়ামী দোসরদের মাঝে পৈশাচিক আস্ফালন দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শতভাগ সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর, অপেশাদারি ও স্বৈরাচারী ঘটনা।
পদোন্নতি জট নিরসনে বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতনের পর থেকে আন্দোলন করে আসা কর্মকর্তাদের দিনের পর দিন মিথ্যা আশ্বাস ও নানা নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা দেখিয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত রাখার পর, পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন" বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম" এর পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় শেষ অবলম্বন আইনী উদ্যোগকে কেন্দ্র করে তাদের
কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মোঃ পনির হোসেন (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য) ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে অন্যায়ভাবে শৃংখলাজনিত মোকদ্দমা, দুর্গম অঞ্চলে বদলি ও মুখ্য সংগঠক মো: আরিফ হোসেনের সাময়িক বরখাস্ত, মূখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি ও ব্যাখ্যা তলব এবং সারাদেশের ২০০ জনের অধিক কর্মকর্তার একই ব্যাপারে ব্যাখ্যা তলবের ঘটনা ঘটে। যা ব্যাংক পাড়ায় বিরল এবং ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যা নীতি নির্ধারনী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ কর্মকর্তারা।
এখানে আরও উল্লেখ্য মো: আরিফ হোসেনের সাময়িক বরখাস্তের কর্মী সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে বলা হয় তাকে "ব্যাংক ও রাস্ট্র বিরোধী" আখ্যা দেয়া হয়, কিন্তু তার ব্যাখ্যা তলব পত্রে বলা হয় তিনি "রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন" যা থেকে বুঝা যায় কোনটির সাথে কোনটি মিল নেই।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে উল্লিখিত কর্মকর্তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাএদলের নির্যাতিত নেতা এবং বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানের জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় সক্রিয় সদস্য, আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো ব্যাখ্যাতলবের জবাব মো: আরিফ হোসেন বিগত ০৬ অক্টোবর ২০২৫ইং আনুমানিক বিকেল ০৫:১০ ঘটিকায় প্রদান করলেও, ওয়েবসাইটের তথ্য ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে
পাওয়া যায় তার সাময়িক বরখাস্ত চিঠি আনুমানিক একইদিন দুপুর ০১:২৪ মিনিটে প্রস্তুত করা হয়, সুতরাং ব্যাখ্যাতলবের জবাব শুধু আনুষ্ঠানিকতা ছিলো মাত্র, স্বৈরাচারী প্রশাসন আগেই সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করে রেখেছিল, যা স্বাভাবিকবাবেই প্রশ্নবিদ্ধ। এতে করে সারা দেশের ব্যাংকটির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জানান,
কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠান যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ না করে, তবে হাইকোর্ট সংবিধানের ১০২ ধারার অধীনে তাদের ক্ষমতা বা দায়িত্ব পালনের জন্য বা অপব্যবহার রোধ করার জন্য আদেশ দিতে পারে। সুতরাং আইনের আশ্রয় চাওয়া সবার মৌলিক অধিকার। এখানে কতৃপক্ষের প্রশ্নবিদ্ধ কোন সিদ্ধান্তের প্রতি আমি সমর্থন করি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধান কার্যালয়ের ব্যাংকটির উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা জানান এই হঠকারী সিদ্ধান্তের নেপথ্যে আছেন ব্যাংকটির ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট একটি সিন্ডিকেট যা নিয়ে ইতোপূর্বে বিভিন্ন পত্রিকায় অনেক সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।
মাঠপর্যায়ের কতিপয় কর্মকর্তা থেকে জানা যায়, তারা তাদের পদোন্নতি জট নিরসনে যেখানে যাওয়া লাগবে সেখানেই যাবে এবং এমন মিথ্যা হুমকি ধামকি মামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না, যৌক্তিক সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন ও আইনি লড়াই চলবে।
আরো জানা যায়, ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের এরুপ অযৌক্তিক ও অন্যায় আচরণের প্রতিকার লাভের জন্য অচিরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার শরনাপন্ন হবেন।
এব্যাপারে সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মো: আরিফ হোসেনে ও সংগঠনটির কেদ্রীয় আহ্ববায়ক মোঃ পনির হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।