আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেছেন, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়াতেই অভিবাসীরা সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছেন। সেখানে পাচারকারী ও মিলিশিয়াদের হাতে তারা অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণের শিকার হচ্ছেন।
সম্প্রতি মরক্কোর রাজধানী রাবাতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোপ বলেন, ভূমধ্যসাগরে যেসব অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের অধিকাংশই লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। “এই সমুদ্রপথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যারা এখনও যাত্রা শুরু করেননি, তারাও বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছেন,” বলেন তিনি।
অপহরণ, মুক্তিপণ ও নির্যাতন
আইওএম মহাপরিচালক জানান, অনেক অভিবাসীই তাদের কাছে বলেছেন, তারা অপহৃত হয়েছেন, মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে এবং নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। “আমি নিজেও সরাসরি শুনেছি কীভাবে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটক হয়ে তারা মুক্তিপণের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন,” বলেন পোপ।
তিনি আরও বলেন, পাচারকারীদের হাতে আটক অভিবাসীদের জন্য লিবিয়া এখন অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত স্থান। এই অভিবাসীদের মধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিকও রয়েছেন।
পোপ জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়া অভিবাসন নীতির কারণে এখন অনেকেই লিবিয়াতেই আটকা পড়েছেন। লিবিয়ার সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৪০ লাখ অবৈধ অভিবাসী রয়েছে।
২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে চলমান অস্থিরতা মানবপাচারকারীদের সক্রিয় করে তুলেছে।
আইওএম মহাপরিচালক আরও জানান, লিবিয়ায় অভিবাসীদের দুর্দশা নতুন নয়, তবে ২০২৩ সালে সুদানে যুদ্ধ শুরুর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে সংঘাত শুরুর পর থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার সুদানি শরণার্থী লিবিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।
পোপ বলেন, “আমরা সবচেয়ে উদ্বিগ্ন সুদানের মতো যুদ্ধের ঘটনায়, যা বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে।”
তিনি জানান, লিবিয়ার পাশাপাশি তিউনিসিয়াও এখন অভিবাসীদের আরেকটি প্রধান যাত্রাপথ। তবে ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ২৯০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তির পর সেখানকার অভিবাসন কিছুটা কমেছে। তবুও হাজার হাজার অভিবাসী, বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকার নাগরিক, এখনো তিউনিসিয়ায় আটকে আছেন।
সবশেষে পোপ বলেন, জাতিসংঘের অর্থায়ন কমে যাওয়ায় অভিবাসীদের সহায়তা দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। “সহায়তা ও সেবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে,” যোগ করেন তিনি।