ঢাকা

ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও মাঝে মাঝেই ছায়া ফিরে আসে

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : ইং
ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

‘আয়নাঘরের সাক্ষী: গুম জীবনের আট বছর’ বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও তার ছায়া মাঝেমধ্যে ফিরে আসে। তাই নতুন বাংলাদেশ গঠনের লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।


শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল অডিটরিয়ামে ‘গুম: ফ্যাসিবাদী শাসনের নিকৃষ্ট হাতিয়ার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।


ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) রচিত ‘আয়নাঘরের সাক্ষী: গুম জীবনের আট বছর’ বইটির মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে সেমিনারটির আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও প্রচ্ছদ প্রকাশন।


আদিলুর রহমান খান বলেন, “জুলাই মাত্র ছত্রিশ দিনেই বাংলাদেশ বদলে গেছে। শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। আজ বাংলাদেশ নতুন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।”


তিনি আরও বলেন, “যারা একসময় গুমের শিকার ছিলেন, আজ তারা নিজের মুখে কথা বলছেন। তখন আমরা জানতাম না তারা কোথায় আছেন, কারণ ফ্যাসিবাদী শাসন পুরো দেশকে বন্দি করে রেখেছিল। এখন দেশ দমন-পীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসেছে। অপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে, অন্যায়ের অবসান ঘটবে।”


জুলাই জাতীয় সনদ ও জুলাই ঘোষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার এই দুই ঐতিহাসিক দলিলের আলোকে রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও এটি বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করে, তাই ঐক্যই হবে তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় শক্তি।”


অনুষ্ঠানে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, “বাংলাদেশে খুনি হাসিনা ও তার সহযোগীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। যেখানেই তাদের পাওয়া যাবে, আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।”


তিনি আরও বলেন, “জার্মানিতে যেমন নাৎসি, ইতালিতে যেমন মুসোলিনির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদী রাজনীতির কোনো স্থান নেই। যারা গুম, খুন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে জড়িত ছিল, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”


সাদিক কায়েম বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে অনেক গুমভুক্ত ব্যক্তিকে আমরা ফিরে পেয়েছি, তবে অনেকের এখনও খোঁজ নেই। আমরা চাই, সব গুমের বিচার হোক এবং দায়ীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় আনা হোক।”


গুমবিরোধী সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, “‘আয়নাঘরের সাক্ষী’ শুধু একটি স্মৃতিকথা নয়, এটি বাংলাদেশের এক অন্ধকার অধ্যায়ের জীবন্ত দলিল। ফ্যাসিবাদী শাসনের সময়ে মতের ভিন্নতার কারণে যাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, তাদের নির্যাতনের ইতিহাস এই বইতে সংরক্ষিত হয়েছে।”


তিনি যোগ করেন, “আমরা বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, কীভাবে মানুষকে ভিন্ন মতের কারণে গুম করা হয়েছিল। একসাথে থাকলে আমরা সেই অন্যায়ের বিচার নিশ্চিত করতে পারব।”


বইটির লেখক ও গুমের ভুক্তভোগী ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান বলেন, “হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। আমি এখনও বিশ্বাস করি—একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সংবিধানসম্মত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব, যেখানে কেউ অন্যায়ের শিকার হবে না, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকবে না।”


অনুষ্ঠানে ডাকসুর নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।




কমেন্ট বক্স