ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার আগে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করবে। নির্বাচনের এই সূচি সামনে রেখে উপদেষ্টা পরিষদের রদবদল এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে দুই ছাত্র উপদেষ্টা, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগের দাবি তুলেছে কিছু রাজনৈতিক দল। দুইজনই পদত্যাগ করে নির্বাচনবিহীন অবস্থায় ভোটের লড়াইয়ে নামবেন কি না, সেটি এখন রাজনৈতিক আড্ডা থেকে টিভি টকশো, রাজধানী থেকে গ্রামের প্রতিটি রাজনৈতিক আলোচনা পর্যন্ত প্রধান আলোচ্য বিষয়।
সরকারি সূত্র ও এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, দুজন ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে তারা আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। এছাড়া তারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও ইতিবাচক বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
জুলাই ২০২৩-এর গণঅভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ২৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে এই দুই ছাত্র উপদেষ্টা বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। মাহফুজ আলম ১০ নভেম্বর উপদেষ্টার শপথ নেন এবং তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো উপদেষ্টাদের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে কিছু উপদেষ্টার বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। বিশেষ করে ছাত্র উপদেষ্টাদের নাম উল্লেখ না করলেও, রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে তারা মূল ইঙ্গিত।
সরকারি সূত্র বলছে, শীর্ষ পর্যায় থেকে তাদের সেপ্টেম্বরে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তখন তারা আরও সময় নেন। তবে বর্তমানে পদত্যাগ আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে।
আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, নির্বাচন তপশিল ঘোষণার আগে তিনি পদত্যাগ করবেন। মাহফুজ আলমও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন, তিনি দুই মাস ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।
নির্বাচনে আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ বা অন্য কোনো আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারেন, যদিও এনসিপির সমর্থন থাকবে। অন্যদিকে মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে জোটগত বা এনসিপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টন চূড়ান্ত না হলে তিনি সরাসরি বিএনপির প্রার্থীও হতে পারেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানিয়েছেন, যেকোনো উপদেষ্টা যদি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চান, তবে পদত্যাগ বাধ্যতামূলক। এরপর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ সত্ত্বেও এনসিপি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র উপদেষ্টাদের থাকা উচিত। এতে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ও গণঅভ্যুত্থানের লেজিটিমেসি বজায় থাকে।
নিউজ ডেস্ক