দুপুরে খাওয়ার পর অনেকেই অভিজ্ঞতা করেন চোখ ঢুলঢুলু হয়ে যাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া ও ঘুম আসার মতো অবস্থা। এই ক্লান্তি শুধুমাত্র অলসতার কারণে নয়, বরং এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
কেন খাবারের পর শরীর ঢলে পড়ে
রক্তে শর্করার ওঠানামা: ভাত, রুটি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তে দ্রুত গ্লুকোজ বাড়ায়। শরীর ইনসুলিন নিঃসরণ করে সেটি কমানোর চেষ্টা করে। হঠাৎ গ্লুকোজ কমে গেলে ক্লান্তি ও মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়।
খাবার হজমের জের: ভরপেট খাওয়ার পর খাবার হজমের জন্য রক্ত হজমপ্রক্রিয়ায় বেশি কাজে লাগে। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কিছুটা কমে যায়, এবং ঘুম আসে।
শরীরের জৈব ঘড়ির প্রভাব: দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দেই ঘুম ঘুম ভাব দেখা দেয়, যা সার্কাডিয়ান ডিপ নামে পরিচিত।
ফরাসি বায়োকেমিস্ট ও ‘গ্লুকোজ রেভল্যুশন’ বইয়ের লেখক জেসি ইনশসপে বলেন, খাবারের ধরনই মূল কারণ। খাবার রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়ায় এবং পরে হঠাৎ কমায়, যা ক্লান্তি ও ঘুমের জন্য দায়ী।
ক্লান্তি কমানোর উপায়
১. সবজি বা প্রোটিন দিয়ে খাবার শুরু করুন: ভাত বা রুটির আগে সালাদ, ডাল বা মুরগি খেলে গ্লুকোজ ধীরে বাড়ে এবং শক্তি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।
২. খাবারের পর হাঁটুন: ২–৫ মিনিট হাঁটলেই শরীর গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে, রক্তে শর্করার ভারসাম্য থাকে এবং ঘুম কম আসে।
৩. সচেতনভাবে পানীয় বেছে নিন: চিনি দেওয়া কোমল পানীয় বা জুস রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বাড়ায়। পানি, লেবুপানি বা চিনি ছাড়া চা বেছে নিন।
৪. মিলিয়ে খান: ফল খেতে চাইলে সঙ্গে প্রোটিন বা চর্বি খান, যেমন আপেলের সঙ্গে বাদাম বা দইয়ের সঙ্গে বেরি।
৫. পরিমাণে নজর দিন: অল্প অল্প করে খেলে হজমে চাপ কম পড়ে এবং শরীর হালকা থাকে।
দুপুরে শক্তি ধরে রাখার জন্য খাবার: সেদ্ধ ডিম, ডাল, সবজি, মাছ, দই, বাদাম ও ফল। এগুলোতে থাকে প্রোটিন, আঁশ ও ভালো চর্বি, যা শক্তি ধরে রাখে।
ঘুম বাড়ায় এমন খাবার: চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত ভাত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার হঠাৎ শর্করার বৃদ্ধির কারণে ঘুম ঘুম ভাব বাড়ায়।
পরামর্শ: আগামীকাল দুপুরে অন্তত একটি অভ্যাস মেনে চলুন—সবজি বা প্রোটিন দিয়ে খাবার শুরু করা, খাবারের পর হাঁটা বা পানি/চা পান করা। নিয়মিত মেনে চললে দুপুরের ক্লান্তি অনেকটাই কমে যাবে এবং দিনের বাকি সময় শক্তি ধরে রাখা সহজ হবে।