ঢাকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেশা বাড়াচ্ছে আত্মহত্যার ঝুঁকি

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : ইং
ছবি: সংগৃহীত ছবি: সংগৃহীত


বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইন্টারনেট আসক্তি ভয়াবহভাবে বেড়ে চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন গেম, বাজি ধরা, পর্নোগ্রাফি কিংবা অনলাইন জুয়ার প্রতি অন্ধ আকর্ষণ তরুণদের মানসিক ভারসাম্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এর প্রভাব পড়ছে তাদের ব্যক্তিজীবন, পড়াশোনা ও সামাজিক সম্পর্কে

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গের্দ্দ বালাপাড়া এলাকার আসিফ আলী (২০) অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে ঋণের দায়ে হতাশ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এমন উদাহরণ একটিই নয়। ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর রংপুরের ১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল; তাদের একজন মারা যায়। ২০২১ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেন আহমেদ বিন রাফি নামে এক শিক্ষার্থী। এসব ঘটনার পেছনে দেখা যায় একটাই মিল—হতাশা ও মানসিক চাপের বেড়াজাল

আজকের তরুণ সমাজ পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক অশান্তি, প্রেমে ব্যর্থতা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত নিমগ্নতার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। অনেকেই নীরবে হতাশা ও উদ্বেগে ভুগছে, যা শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী প্রবণতা সৃষ্টি করছে।


জরিপ ও গবেষণার ভয়ঙ্কর চিত্র:

বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন–এর ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক অবসাদের মূল কারণ ইন্টারনেট আসক্তি। অনেকে পড়াশোনার পাশাপাশি সময় কাটানোর জন্য অনলাইন গেম, ভিডিও দেখা বা অনলাইন কেনাকাটায় আসক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ এমনকি সাইবার অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী, ৩৫ শতাংশ হতাশায় ভুগছে এবং ২০ শতাংশ সামাজিকভাবে একাকী হয়ে পড়ছে

অন্যদিকে, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল–এর ২০২১ সালের জরিপ বলছে, ৭৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ভিডিও দেখায় আসক্ত, ৫৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়, এবং ৫৪ শতাংশ গেমিংয়ে যুক্ত। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণরা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রতি সাতজনের একজন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত, আর ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা


বিশেষজ্ঞদের মতামত:

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, “ইন্টারনেট আসক্তি এখন তরুণদের জন্য মাদকাসক্তির মতোই বিপজ্জনক। রাত জাগা, পরিবার থেকে দূরে থাকা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি এবং ক্যারিয়ারের অতিরিক্ত চাপ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।”

তিনি আরও বলেন, অনেক অভিভাবক সন্তানদের ওপর অতি প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দেন, যা মানসিক চাপ বাড়ায়। “সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে, সময় দিতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে। জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়,” যোগ করেন তিনি।


করণীয়:

বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য। অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরামর্শ কার্যক্রম চালু করতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ বৃদ্ধি, এবং আত্মউন্নয়নমূলক ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা গেলে তরুণদের হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকটাই কমানো সম্ভব।  




কমেন্ট বক্স