ঢাকা

সর্বকনিষ্ঠ নভোচারীর নেতৃত্বে মহাকাশে চীনের নতুন যাত্রা

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : ইং
ছবি: সংগৃহীত ছবি: সংগৃহীত


চীন আবারও মহাকাশ অভিযানে নতুন ইতিহাস গড়েছে। দেশটি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী নভোচারীসহ তিন সদস্যের একটি দলকে তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছে। শুধু মানুষই নয়, তাদের সঙ্গে মহাকাশে গেছে চারটি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ইঁদুরও। শনিবার (১ নভেম্বর) ভোরে “শেনঝো-২১” নামের মহাকাশযানটি সফলভাবে তিয়ানগং স্টেশনে পৌঁছায়।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানায়, স্থানীয় সময় রাত ৩টা ২২ মিনিটে মহাকাশযানটি স্টেশনে যুক্ত হয়। এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আগে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এই অভিযানের মাধ্যমে চীন তাদের নিয়মিত মহাকাশ স্টেশন রোটেশন প্রক্রিয়ায় আরেকটি সফল অধ্যায় যোগ করল।

বর্তমানে বিশ্বে সক্রিয় দুটি মহাকাশ স্টেশন রয়েছে— যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার যৌথভাবে পরিচালিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) এবং চীনের নিজস্ব তিয়ানগং স্টেশন। তিয়ানগং স্টেশনে প্রতি ছয় মাস পরপর নতুন নভোচারী দল পরিবর্তন করা হয়।

এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অভিজ্ঞ পাইলট ঝ্যাং লু, যিনি এর আগে একাধিক মহাকাশ মিশনে যুক্ত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আছেন মাত্র ৩২ বছর বয়সী ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার উ ফেই, যিনি এখন পর্যন্ত চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী নভোচারী হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। তৃতীয় সদস্য ঝ্যাং হংঝ্যাং, যিনি যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে আছেন।

উৎক্ষেপণের আগে তিন নভোচারী চীনের গোবি মরুভূমিতে অবস্থিত কেন্দ্র থেকে পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে আবেগঘন বিদায় নেন। প্রথমবার মহাকাশে যাওয়া উ ফেই বলেন, “নিজেকে আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করছি। এই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।”

এবারের অভিযানে আরও এক আকর্ষণীয় দিক যুক্ত হয়েছে— চারটি ইঁদুরের মহাকাশযাত্রা। প্রায় ৩০০ ইঁদুরের মধ্য থেকে দুটি পুরুষ ও দুটি নারী ইঁদুর বেছে নেওয়া হয়। এদের মহাকাশ অভিযানের উপযোগী করতে দুই মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গবেষকরা দেখতে চান, মহাকাশের ওজনহীনতা ও সীমিত পরিবেশে ইঁদুরগুলোর দেহ ও আচরণে কী ধরনের পরিবর্তন আসে। এটি ভবিষ্যতে মানবদেহের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অভিযানে সহায়ক তথ্য দেবে।

চীনের মহাকাশ কর্তৃপক্ষ জানায়, এই অভিযানের মাধ্যমে তিয়ানগং স্টেশনে আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জীববিজ্ঞান পরীক্ষা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। শেনঝো-২১ মিশন সফলভাবে সম্পন্ন হলে, চীনের পরবর্তী লক্ষ্য হবে চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি ঘাঁটি স্থাপন এবং মানব বসতি স্থাপনের প্রস্তুতি।

চীনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, “এই অভিযান কেবল প্রযুক্তিগত নয়, মানসিক প্রস্তুতিরও এক পরীক্ষা। মহাকাশে মানুষ ও প্রাণীর সহাবস্থান নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতের মহাকাশ জীববিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে যাবে।”



কমেন্ট বক্স