ঢাকা

দেশের ৬৪ শতাংশ রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : ইং
ছবি : সংগৃহীত ছবি ছবি : সংগৃহীত ছবি

রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের প্রায় ৬৪ শতাংশ রেলপথ বর্তমানে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিকল্পনা, অপারেশন ও প্রকৌশল দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ রেললাইনই নিয়মিত মেরামতের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

গত দেড় দশকে রেল খাতে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও পুরোনো রেললাইন ও সেতুগুলোর সংস্কারে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে অনেক রুটেই ট্রেন সর্বোচ্চ গতির মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ গতিতে চলছে।

রেলওয়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে তিন হাজার ৯৩ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ৪০০ কিলোমিটার অংশে লোহার পাত ও ২০০ কিলোমিটার অংশে স্লিপার বদলানো জরুরি। শুধু পূর্ব রেলেই পাঁচ লাখ ঘনমিটার পাথরের ঘাটতি রয়েছে।

অপর্যাপ্ত পাথর, মাটি সরে যাওয়া ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে আখাউড়া-সিলেট, ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর, জামালপুর-তারাকান্দি, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু রুটে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কোথাও লাইনের নিচের মাটি সরে গেছে, কোথাও হুক বা নাট-বল্টু নেই।

রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথের ৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৫ কিলোমিটারই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ১৯৬২ সালের পর থেকে এ অংশে বড় কোনো সংস্কার হয়নি। সম্প্রতি রাজশাহীর চারঘাটে রেলপথের দুই ফুট ভেঙে গেলে স্থানীয়রা আলো জ্বালিয়ে ও লাল কাপড় উড়িয়ে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস থামিয়ে ৭০০ যাত্রীর প্রাণ রক্ষা করেন। গত বছরও একই রুটে এমন দুটি ঘটনা ঘটে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, জনবল সংকট ও বাজেট স্বল্পতার কারণে দেড় বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম কার্যত স্থবির। অথচ প্রতিবছর রেলপথে ৫ থেকে ৭ শতাংশ নতুন নুড়িপাথর দেওয়া বাধ্যতামূলক।

পশ্চিম রেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আহসান জাবির বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো মেরামতের কাজ চলছে। যতটা সম্ভব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ট্রেন চলাচল চালু রাখা হচ্ছে।”

অন্যদিকে সিলেট-আখাউড়া রেলপথের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ১৭৯ কিলোমিটারের এই রুটের অন্তত ১৩টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। কোথাও ব্যাগ দিয়ে বেঁধে ফিসপ্লেট আটকানো হয়েছে, কোথাও স্লিপারের হুক-নাট-বল্টু নেই। গত দেড় দশকে এ রুটে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, “পূর্বাঞ্চলে কিছু স্থানে রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি আছে। তবে তেমন ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন নেই। বাজেট স্বল্পতার কারণে সংস্কারে বিলম্ব হচ্ছে।”

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে রেললাইনের ত্রুটিজনিত লাইনচ্যুতি ঘটেছে ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়বে।



কমেন্ট বক্স