বগুড়ার শিবগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যাচেষ্টা মামলার দুই আসামি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। সম্প্রতি পৃথক কর্মীসভায় তারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর শাহে আলমের হাতে ফুল দিয়ে দলবদল করেছেন।
এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। সাধারণ জনগণ বলছেন, ৫ আগস্টের পর জেলায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে শিবগঞ্জ থেকে। এসব মামলা থেকে বাঁচতে ও চেয়ারম্যানশীপ রক্ষায় চাপের মুখে এরা দু’জন বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।
দলবদলকারীরা হলেন—বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা রেজিস্ট্রার এসকেন্দার আলী শাহানা ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক থেকে অব্যাহতি পাওয়া আবদুল মোত্তালেব মোল্লা।
এরা দু’জন বগুড়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর ‘ঘনিষ্টজন’ বলে পরিচিত।
আবদুল মোত্তালেব মোল্লা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় দু’টি নাশকতার মামলা আছে। তিনি ওই মামলায় জামিনে আছেন।
এসকেন্দার আলী শাহানা ফোন না ধরায় তার স্বজনরা জানান, তিনি কখনও জাপার রাজনীতি করেননি। তার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের পর শিবগঞ্জ থানায় তিনটি ও সদর থানায় একটি মামলা হয়েছিল। পরবর্তীতে চার্জশিটে শাহানার নাম বাদ পড়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বগুড়া জেলার ১২ থানায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যক হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও নাশকতার মামলা হয়। প্রতিটি মামলায় ২৫০ থেকে পাঁচ শতাধিক আসামি করা হয়েছে।
অনেক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, দিপু মনি, জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ দায়িত্বশীল নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকে আসামি করা হয়।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাপা সমর্থক এসকেন্দার আলী শাহানা ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোত্তালেব মোল্লাকে সদর ও শিবগঞ্জ থানায় কয়েকটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়। এসব মামলায় কিছু সংখ্যক দায়িত্বশীল নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। অধিকাংশ নেতাকর্মী পরিবার-পরিজন ফেলে আত্মগোপনে রয়েছেন। পলাতক থাকায় অনেক জনপ্রতিনিধিকে সরিয়ে সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান বা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়ার শিবগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জানান, মাঝিহট্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসকেন্দার আলী শাহানা ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মোত্তালেব মোল্লা এসব মামলা থেকে বাঁচতে এবং চেয়ারম্যানশীপ রক্ষায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী যারা ওইসব মামলার প্রধান হোতাদের সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হন। তারা স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি ও বগুড়া-২ আসনে বিএনপির ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর শাহে আলমের প্রচারণার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শুরু করেন।
এ সমঝোতার কারণে অন্য আসামিরা জামিন না পেলেও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মোত্তালেব মোল্লা দুটি হত্যাচেষ্টার মামলায় জামিন লাভ করেন। এছাড়া এসকেন্দার আলী সাহানার চারটি মামলায় চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ দু’জন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সাবেক সংসদ সদস্য জেলা জাপা সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নার পক্ষে তারা অনুদানের কমিশন বাণিজ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি নিয়োগে ডিও বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
প্রভাবশালী জাপা নেতা সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মোত্তালেব মোল্লার বিএনপির সঙ্গে উঠাবসার বিষয়টি নজরে এলে গত ২৫ অক্টোবর শিবগঞ্জ উপজেলা জাপার নির্বাহীর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সর্বসম্মতিতে ও জেলা জাপার সভাপতি সাবেক এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নার নির্দেশে সভাপতি এরফান আলী প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আবদুল মোত্তালেব মোল্লাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেন।
এর ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার বিকালে মাঝিহট্ট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসভায় মীর শাহে আলমের হাতে ফুল তুলে দিয়ে বিভিন্ন দলের পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ বিএনপিতে যোগদান করেন, এসকেন্দার আলী সাহানা।
এছাড়া বুধবার রাতে উপজেলার হাবিবপুর কলেজ মাঠে সৈয়দপুরে ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসভায় দলবলসহ বিএনপিতে যোগদান করেন, জাপা থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতা আবদুল মোত্তালেব মোল্লা। দুটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম।
বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবদুস শুকুর ও অন্য কর্মকর্তারা জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসকেন্দার আলী শাহানা এবং সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মোত্তালেব মোল্লার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাচেষ্টার রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। তবে তারা জামিনে আছেন কি না তা নথি না দেখে বলা সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে আবদুল মোত্তালেব মোল্লা বলেন, তিনি বিএনপি নেতাদের চাপের মুখে, মামলা থেকে বাঁচতে বা চেয়ারম্যানশীপ রক্ষায় নয়; ভালোবেসে দলবল নিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। এর আগে তাকে উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল; তবে কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
এসকেন্দার আলী সাহানা ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্বজনরা জানান, তিনি কখনও জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেননি। এলাকার সংসদ সদস্য জাপার ছিল; তাই জনগণের স্বার্থে তার কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়েছে। তার পরিবার বিএনপি সমথর্ক। এ কারণে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে